শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন

গুরুত্বপূর্ণ গেরিলা অপারেশন

গুরুত্বপূর্ণ গেরিলা অপারেশন

দ্বিতীয় পর্ব:
২নং- সেক্টর কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ গেরিলা যোদ্ধা কাজী কামালের নেতৃত্বে দশ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- ঢাকা সংলগ্ন সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। যাতে রাজধানী ঢাকা শহরের তিন ভাগের দুইা ভাগ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা দুইবার চেষ্টা করেও পাওয়ার ষ্টেশনটির কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে নাই। তাই কাজী কামালের নেতৃত্বে তৃতীয় দলটিকে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছিল। দলটিতে ছিল তিন ইঞ্চি রকেট লাঞ্জার, ৮টি রকেট সেল এবং প্রত্যেক যোদ্ধাকে এস.এম.জি কিংবা স্টেনগান দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকের সাথে ছিল ৪টি ম্যাগজিন ভর্তি গুলি। এবার এই দু:সাহসিক অভিযানের যাত্রা শুরু হল মুগদাপাড়া থেকে দুটি নৌকায় চড়ে; গন্তব্যস্থল শীতলক্ষা পারহয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার স্টেশন। অপারেশনে অংশ নিল কাজী কামালের নেতৃত্বে বদি, রুমি, আজাদ, সামাদ, জুয়েল, আহম্মেদ জিয়া প্রমুখ দু:সাহসিক গেরিলারা। কিন্তু বিধিবাম। মাঝপথে তারা পাকা হানাদারদের রণসজ্জিত এক পেট্রোল টহলরত গানবোটের সামনে পড়ল। উপায়ান্ত না দেখে, কমান্ডারের নির্দেশ ছাড়াই অসম সাহসী বদি ফায়ার ওপেন করল পাক বাহিনীর উপর; তখন অন্য গেরিলারাও বাধ্য হয়ে পাক বাহিনীকে তাক করে গুলি ছুটতে লাগল। হটাৎ এমন আকস্মিক আক্রমনে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হলো। কিন্তু তাদের কভারিং স্ফায়ারের কারণে জুয়েল এবং বদির হাতে স্প্রিন্টার ঢুকে গেল। প্রচুর রক্তক্ষরণ হলো বধির হাত থেকে। তদুপরি রুমি বাংলা মটরর্সের কাছে পরিচিত ডাক্তার আঙ্কেল রশিদ উদ্দিনের চেম্বারে নিয়ে তাদের চিকিৎসা করাল। জুয়েলের আঙ্গুলে প্লাস্টার করানো হলো। কিন্তু গেরিলারা হার মানতে জানে না। তাই ৭১’ সনের ২৮শে নভেম্বর ধানমন্ডিতে বাদলের ডেরায় গেরিলাদের গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- আজাদের পরিচিত এমন দুইজন প্রকৌশলী আছে, যারা স্বাধীনতা কামী বাঙালী। তাই তাদের গাড়িতে করে বিস্ফোরক দ্রব্য এক্সক্লোসিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঢোকানো হলো। আর গেরিলা দলটি সঠিক সময়ে, সঠিক দিনে এলাকাটি রেকি করল এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক্সক্লোসিভ দ্বারা বিস্ফোরন ঘটিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনাটি উড়িয়ে দিল। তখন মনের আনন্দে তারা কবি শামসুর রহমানের সেই বিখ্যাত কবিতার একাংশ আবৃতি করতে লাগল: ‘ঝানু গুপ্তচর, সৈন্য পাড়ায় পাড়ায়। তন্ন তন্ন করে খুঁজে প্রতিঘর। খুঁজে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের। পারলে নীলিমা চিরে বের করত আমাদের।’

শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক, একুশে টাইমস্

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana